Day
Night
শিশু আর পথশিশু—এই শব্দ দুটি আলাদা মনে হলেও শিশু আর পথশিশু কিন্তু প্রায় একই শব্দ।শিশু আর পথশিশুর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ দেখা যায় না।যদিও তারা রাস্তায় জীবন যাপন করার কারণে পরিচিত হয় পথশিশু হিসেবে। আসলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, মানবতা ও মনুষ্যত্ব দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে আমাদের দেশে দিন দিন বেড়ে চলেছে পথশিশুর সংখ্যা । আর এর মূল কারণ হলো অজ্ঞতা, দারিদ্র্য, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব। অনেক পিতা মাতা আছে যারা জন্মের পর সন্তানকে অবহেলা করে। আবার রোজগার করার জন্য সন্তানদের মারধর করে। আর তখনই শুরু হয় তাদের অবহেলিত কষ্টের জীবন। পথশিশুদের এইভাবে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে কোমল মুখগুলো পরিচিত হয় নতুন অনেক অসহনীয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে। পথশিশুদের মাঝে সমাজের এই কঠিন বাস্তবতা এমনভাবে রূপ ধারণ করে নেয় যে, একসময় ওরাই হয়ে ওঠে সমাজের খারাপ মানুষ নেশাখোর, ছিনতাইকারী ইত্যাদি।
কি হবে সেই শিশুদের ভবিষ্যৎ? যারা রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করে, ফুল বিক্রি করে কিংবা কিছু খাবে বলে অন্যের কাছে হাত পাতে।তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা আমাদের জানা নেই। যখন তাদের হাতে থাকার কথা ছিল বই-খাতা, তখন সেই অল্প বয়সে তাদের হাতে থাকে প্লাস্টিকের বস্তা। রাস্তায় রাস্তায় তারা প্লাস্টিক খোঁজে। তখন তাদের নাম হয়ে যায় টোকাই। কী নির্মম বেদনাময় দৃশ্য!
এসব তারা করে শুধু দুই বেলা দুমুঠো ডাল–ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য। খোলা আকাশের নিচে রাস্তার পাশে, রেললাইনের ধারে শান্তিতে একটু ঘুমিয়ে থাকার জন্য। ইচ্ছা করে বা কোনো স্বপ্ন পূরণের জন্যও নয়। কিন্তু পথশিশুরাও তো মানুষ, ওদেরও তো জীবন আছে, জীবনের ইচ্ছা ও স্বপ্ন আছে। স্বাধীন ও সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার আছে।
খাদ্য ও বাসস্থান পথশিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন । এরপর তাদের প্রয়োজন ভালো গাইডলাইন। যদি এসব শিশু গাইডলাইনের ভেতর দিয়ে না যায়, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত অন্ধকার। এখন দেখা যায়, পরিবারের সঙ্গে থেকেও অনেক ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যায়। সেখানে রাস্তায় থাকা এসব ছেলেমেয়ের বিপথে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার বলে মনে হয় না।
অতএব সরকারের সহয়তায় হোক আর বেসরকারি সহয়তায় হোক, পথশিশুদের থাকা-খাওয়া ও পড়াশোনার মাধ্যমে অন্য বাচ্চাদের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর যখন সবার সম্মিলিত প্রয়াস থাকবে, তখন অবশ্যই পথশিশু নামক কোনো নাম শিশুর সঙ্গে যুক্ত হবে না। মুছে যাবে টোকাই নামক শব্দটি। আর ফিরে পাবে স্বাভাবিক জীবন। শিশু থাকবে শিশুর মতোই। একসময় তারাই সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়বে ও মানব বাগানের ফুল হয়ে সুবাস ছড়াবে।